ছোট্ট এক কিশোরীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক ভদ্রমহিলা। পিছনে উড়ছে ইউক্রেনের জাতীয় পতাকা। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে কয়েকটি পর্বশৃঙ্গ। আর অন্যদিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসছে মিসাইল। এই ‘অন্যদিক’-টি যে রাশিয়া, সেটিও দেখানো হয়েছে তিনরঙা জাতীয় পতাকা এঁকে। ছবির পাশে রাশিয়ান হরফে লেখা হয়েছে ‘নো টু ওয়্যার’ (No To War)।
না, খ্যাতনামা কোনো শিল্পীর আঁকা নয় এই ছবি। কাঁচা হাত। দেখলেই বোঝা যায় এখনও বয়ঃসন্ধি পেরোয়নি শিল্পী। তবে এই ছবি আঁকার জন্যই ‘দেশদ্রোহিতা’-র সাজা পেতে হল তাকে।
সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য এক ঘটনার সাক্ষী হল, মস্কোর ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ইয়েম্রেফভ শহরের বাসিন্দা মাশা মোসকালেভা (Masha Moskaleva)। না, সাম্প্রতিক ঘটনা বললে ভুল হবে খানিক। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসেই ঘটেছিল এই ঘটনা। তবে সম্প্রতি তা প্রকাশ্যে আসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দৌলতে।
মাশা ১২ বছরের কিশোরী। স্কুলের ছাত্রী। আর সেখানেই ড্রইং ক্লাসে এমন এক বিপত্তি বাঁধিয়ে বসেছিল সে। শিক্ষকের নির্দেশে ‘ইচ্ছেমতো’ ছবি আঁকার স্বাধীনতা পেয়ে ড্রইং খাতায় যুদ্ধের ছবিই ফুটিয়ে তুলেছিল মাশা। হ্যাঁ, শিক্ষকদের কাছে প্রাথমিকভাবে বকাঝকা তো খেতেই হয়। তবে কেই-বা জানত, এই ছবির জন্য এত বড়ো ঝক্কি পোহাতে হবে তাঁর পরিবারকে?
কয়েকদিনের মধ্যেই তার বাড়িতে হানা দেয় রাশিয়ান পুলিশ। বাবার সামনেই ছোট্ট কিশোরীকে তুলে নিয়ে যায় তারা। শুরু হয় তদন্ত। মাশার বাবা অ্যালেক্সিরও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট কয়েকদিনের জন্য বন্ধ করে দেয় রুশ গোয়েন্দারা। সেখান থেকে জানা গিয়েছিল, তিনি নাকি আবার পুতিনের অন্যতম বিরোধী অ্যালেক্সি নাভালনির সমর্থক। ফলে প্রশাসনের রক্তচক্ষু থেকে রেহাই মেলেনি কোনোভাবেই। সেইসঙ্গে তাঁর সন্তানের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং অত্যাচার করা হয়েছে বলেই দাবি মাশার বাবা অ্যালেক্সির।
ফৌজদারি মামলার প্রেক্ষিতেই সপ্তাহ খানেক আগে ৩২ হাজার রুবেলের জরিমানা দিতে হয় অ্যালেক্সিকে। বার বার দ্বারস্থ হয়েছেন বিভিন্ন প্রশাসনিক নেতা, সামরিককেন্দ্রে। তবে তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত সন্তানকে নিজের কাছে ফিরে পাননি তিনি। সম্প্রতি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই নতুন করে তা সাড়া ফেলে দিয়েছে জনমানসে। কিন্তু কবে রেশ পড়বে এই রাষ্ট্রবাদের— তা জানা নেই কারোরই…
Powered by Froala Editor