সূর্যোদয়ের দেশে আজ এক ইতিহাস তৈরি করল সিরিয়ার প্রতিনিধি হেন্দ জাজা। অলিম্পিকের ময়দানে আজ ১২ বছরের জাজা মুখোমুখি হল ৩৯ বছরের অস্ট্রিয়ান টেবিল টেনিস খেলোয়াড় লিউ জিয়ার সঙ্গে। হ্যাঁ, মাত্র ১২ বছর বয়সেই অলিম্পিকে অংশ নিল জাজা। বিগত ৫২ বছরের অলিম্পিকের ইতিহাসে জাজাই সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী।
যদিও অলিম্পিকে প্রথম আবির্ভাবে পরাজয়ই স্বীকার করতে হয় তাকে। লিউ জিয়ার কাছে স্ট্রেট সেটে (৪-১১, ৯-১১, ৩-১১, ৫-১১) হেরে বিদায় নিতে হয়েছে। কিন্তু তাতেই কি সব শেষ?
এই ১২ বছরের জীবনেই কম উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি হেন্দ জাজাকে। আরব স্প্রিং পরবর্তী গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিতে ঘরছাড়া সিরিয়ার লক্ষাধিক মানুষ। আর সেই উদ্বাস্তু শিবিরেই জন্ম জাজার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ কোনোদিনই পায়নি। তার সঙ্গে বাড়তি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে তার লিঙ্গপরিচয়। মেয়ে হয়ে খেলাধুলো করবে! এমনটা মেনে নিতে পারেনি অনেকেই। প্রশিক্ষণকেন্দ্রের দরজা থেকে ফিরে যেতে হয়েছে বারবার। তবু হাল ছাড়েনি জাজা। আর এই পুরো লড়াইতে পাশে পেয়েছে পরিবারকে।
শুরুটা হয়েছিল মাত্র ৫ বছর বয়সে। দাদার টেবিল টেনিস খেলার একটি ভিডিও দেখে নিজেরও একইভাবে খেলতে ইচ্ছে করে জাজার। দাদার কাছেই প্রথম হাতেখড়ি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সবাই বুঝতে পারেন, জাজাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো ক্ষমতা পরিবারের আর কারোর নেই। কারণ তার প্রতিভা সবার চেয়ে বেশি। অথচ কোনো প্রশিক্ষণকেন্দ্রেই ভর্তির সুযোগ হয় না। ফলে নিজে নিজেই অনুশীলন করতে হত তাকে। আর কঠোর পরিশ্রমেই নিজেকে প্রমাণ করেছে সে।
ইতিমধ্যে সিরিয়ার জাতীয় স্তরে প্রতিটি বিভাগে চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি জয় করেছে জাজা। বয়সের গণ্ডিতে তার প্রতিভাকে বেঁধে রাখা যায়নি। লিঙ্গপরিচয়ে তো নয়ই। গতবছর অলিম্পিকের নির্বাচনী ম্যাচেও মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত প্রতিযোগীকে হারিয়ে টোকিওযাত্রার ছাড়পত্র পেয়েছে জাজা। সিরিয়ার ৬ সদস্যের অলিম্পিক দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুখ হেন্দ জাজা। যদিও হেরে গেলেও ভেঙে পড়েনি সে। জানে, একদিন না একদিন সেই স্বপ্ন ছোবে সে। টেবিল টেনিসের পাশাপাশি চলছে পড়াশোনাও। রয়েছে আগামী দিনে ফার্মাসিস্ট হওয়ার স্বপ্নও। উদ্বাস্তু জীবনে ওষুধের প্রয়োজন যে কতখানি, তা নিজের জীবন দিয়ে দেখেছে সে। এই জেদের কাছে একদিন সমস্ত স্বপ্নকেই মাথা নোয়াতে হবে নিশ্চিত।
Powered by Froala Editor