সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য কিংবা রহস্যময় গভীর সমুদ্রের প্রাণীদের নিয়ে উৎসাহের অন্ত নেই মানুষের। কিন্তু তা সত্ত্বেও এতদিন অনাবৃতই থেকে গেছে সমুদ্রতলের জীবজগত। গত পাঁচ বছর ধরে সেই অনাবিষ্কৃত অধ্যায়ের বিশদ পর্যবেক্ষণেই বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন ১২টি নতুন প্রজাতি। যার মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মস, কোরাল এবং বেশ কিছু শামুক গোত্রীয় প্রাণী।
তবে সদ্য খুঁজে পাওয়ার পরই তাদের হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিলেন গবেষকরা। জলবায়ুর পরিবর্তন হয়ে উঠেছে এই সকল জীবগুলির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম শত্রু। গবেষকরা জানাচ্ছেন, বায়ুতে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতির কারণে বাড়ছে সমুদ্রে তার দ্রবীভবনের মাত্রাও। ফলে সমুদ্রের জল ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে আম্লিক। যা কোরাল এবং শামুক জাতীয় প্রাণীদের বাইরের শক্ত আস্তরণের দ্রুত ক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার সঙ্গে দোসর হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নও।
তবে এই জীবগুলির অস্তিত্ব হারালে সামগ্রিকভাবে ভয়ানক প্রভাব পড়বে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যে। সেই ব্যাপারেই সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা। সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত এই জীবগুলি নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন মৎস্য প্রজাতির প্রজননকে। তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়লে বিঘ্নিত হবে গোটা বাস্তুতন্ত্রই।
এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন লিভারপুল এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। প্রধান গবেষক জর্জ ওলফ খানিকটা আক্ষেপের সুরেই গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন চাঁদ কিংবা মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র তৈরি হয়ে গেলেও এখনও সমুদ্রের তলদেশের কোনো মানচিত্রই তৈরি করতে পারেনি আধুনিক বিজ্ঞান।
এবার সেই কাজেই ব্রতী হয়েছেন আটলান্টিন মহাসাগরের তীরবর্তী ১৩টি দেশের গবেষকরা। ‘প্রজেক্ট আটলান্টা’ নামের এই গবেষণার মূল লক্ষ্যই হল সমুদ্রের অজানা বাস্তুতন্ত্রের হদিশ পেতে এক মানচিত্র প্রস্তুত করা। সমুদ্রের বিরল বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপারে অবগত হলে বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপ। আটলান্টিকে ক্ষেত্রবিশেষে বন্ধ করা হতে পারে খনিজ উত্তোলনও।
তবে শুধু আটলান্টিক মহাসাগরই নয়, অন্যান্য মহাসাগরগুলির ক্ষেত্রেও সমান বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে এই ধরণের অজানা সামুদ্রিক জীবজগতের। প্রকৃতির সংরক্ষণে উত্তর আটলান্টিক তীরবর্তী দেশগুলি এই অভিনব উদ্যোগ নিলেও, বাকিদের ক্ষেত্রে ত্রাতা হয়ে কারা দাঁড়াবে— তা এখনও অনিশ্চিত...
আরও পড়ুন
কৃষিক্ষেত্রের মাত্রাতিরিক্ত সম্প্রসারণ, ৩০ বছরে ২০ হাজার প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা
Powered by Froala Editor