১৫৩২ সালের আয়ারল্যান্ড। দিনটা ছিল ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ’। হ্যালোউইনস ডে। সেদিন রাতেই ডাবলিন শহরের একটি বারে রাত্রিযাপনের পর, ফেরার পথেই নিহত হলেন এডওয়ার্ড ব্রাউন নামের এক ব্যক্তি। নিহত না বলে, খুন হলেন বলাই ভালো। এর প্রায় পাঁচ শতক পরে কবরের মধ্যেই হঠাৎ ঘুম ভাঙল তাঁর। একুশ শতকের পৃথিবীতে নবজন্ম হল প্রতিশোধস্পৃহা নিয়ে।
কথা হচ্ছে সদ্যপ্রকাশিত উপন্যাস ‘মার্ডার অ্যাট দ্য লিকি ব্যারেল’ নিয়ে। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় এখন রীতিমতো হটকেকের মতো বিকোচ্ছে এই উপন্যাস। চারটি দেশেই জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ইংরাজি ক্রাইন-থ্রিলারটির কিন্ডল এডিশন। আর লেখক জোশুয়া বিজয়ের মুকুটে উঠেছে ‘বেস্ট-সেলিং অথর’-এর শিরোপা।
অবাক লাগছে? এত জনপ্রিয় হলেও, ইতিপূর্বে লেখকের নাম শোনেননি নিশ্চয়ই? সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, এটাই প্রথম বই একাদশ বছরের জোশুয়ার। তার প্রথম কোনো প্রকাশিত লেখাও বটে। হ্যাঁ, পুনের ষষ্ঠ শ্রেণির কিশোর পড়ুয়াই এবার ইতিহাস গড়ে ফেলেছে সাহিত্যজগতে। সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় হিসাবে ‘বেস্ট সেলার’-এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে জোশুয়া।
জোশুয়ার বাবা বেজয় থমাস পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশনের অ্যান্ড রিসার্চের সহকারী অধ্যাপক। মা সুমা সানি একজন স্বাধীন সাংবাদিক। ফলে, ছোটো থেকেই সাহিত্যচর্চার পরিবেশের মধ্যেই বড়ো হয়ে উঠেছে জোশুয়া। মায়ের দৌলতেই সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ গড়ে উঠেছিল স্কুলে পা দেওয়ার পর থেকেই। তারপর কবিতার সূত্র ধরে হাতেখড়ি লেখালিখিতে। ধীরে ধীরে ছোটোগল্প হয়ে উপন্যাস।
গত বছরের মার্চ মাসের শেষে মহামারীর আবহে গোটা দেশজুড়ে ঘোষিত হয়েছিল লকডাউন। সকলের মতোই হঠাৎ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছিল জোশুয়া। বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল বাইরের পৃথিবী থেকে। আর সেই অবসর সময় কাটাতেই ছোটোগল্প ছেড়ে ‘মার্ডার অ্যাট দ্য লিকি ব্যারেল’-এর প্লটে নিজেকে খুঁজেছিল সে। অনলাইন ক্লাস, হোমওয়ার্ক সামলে গল্পটা গুটিয়ে আনতে সবমিলিয়ে সময় লেগেছিল সাত মাস।
প্রাথমিকভাবে অন্যান্য লেখালিখির মতোই এই উপন্যাসটিকেও প্রকাশ্যে আনতে চায়নি লাজুক কিশোর। মায়ের অনুপ্রেরণাতে পরবর্তীতে অবশ্য সেটি সে প্রকাশ করে মালয়ালি লেখকদের একটি গ্রুপ ‘বুকস্থাকম’। জোশুয়ার কৌতূহলবুনন এবং রহস্য তৈরি করার দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে, তাঁরাই উদ্যোগ নেন এই উপন্যাস বই হিসাবে প্রকাশ করার। ছাপানো বইয়ের পাশাপাশি বাজারে আসে কিন্ডেল ভার্সান। তবে লকডাউনের বাজারেও আন্তর্জাতিকভাবে এই মাত্রায় জনপ্রিয়তা পাবে জোশুয়ার প্রথম বই, সে ব্যাপারে কোনো ধারণাই ছিল না তাঁদের।
কিন্তু এই একটি লেখাতেই থেমে থাকেনি জোশুয়া। বরং, সমান্তরালভাবেই চলছে তার আরও দুটি উপন্যাসের কাজ। সেগুলি প্রায় শেষের দিকেই। পাশাপাশি চলছে সংশ্লিষ্ট উপন্যাসটির মালয়ালি অনুবাদ প্রকাশের কাজও। সবমিলিয়ে ভারতের সাহিত্যজগতে এই নতুন তারকার উত্থান ঘিরে রীতিমতো উত্তেজিত পাঠকমহল…
Powered by Froala Editor