সকাল হলেই বইখাতা বগলদাবা করে স্কুলে ছুটত সময়বয়সীরা। জানলা দিয়ে তিনি মাঝে মাঝেই উঁকি দিতেন স্কুলঘরের ভেতরে। ইচ্ছে হত, তিনিও একদিন শিক্ষিকা হবে। পড়াবেন কচিকাচাদের। কিন্তু কোথায় আর শিক্ষিকা হওয়া? অর্থের অভাবে স্কুলে যাওয়াই হয়ে উঠল কোনোদিন। তারপর মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে। হেঁশেল টানতে, সংসার সামলাতেই কেটে গেল বাকি জীবন। তবে পড়াশোনার আগ্রহ পিছু ছাড়েনি কখনো। শেখার কি বয়স আছে কোনো? ১০৪ বছর বয়সে পৌঁছে সেটাই প্রমাণ করে দিলেন কেরলের ‘তরুণী’।
সম্প্রতি, অনন্য নজির তৈরি করলেন কোয়াট্টাম জেলার আয়ারকুন্নাম পঞ্চায়েতের কুট্টিয়াম্মা (Kuttiyamma)। কেরলের (Kerala) রাজ্য সাক্ষরতা মিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন ১০৪ বছরে পা দিয়ে। আর তাঁর ফলাফলও রীতিমতো ঈর্ষণীয়। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৮৯ নম্বর আদায় করে নিয়েছেন কেরল তরুণী।
তবে শুনলে অবাক হওয়ার কথা, প্রথাগত পড়াশোনায় তাঁর হাতেখড়ি মাত্র এক বছর আগে। মাতৃভাষা হওয়ায় তার আগে পর্যন্ত গোটা কতক মালায়লম ছড়া জানলেও, ভাষাটা লিখতে বা পড়তে— কোনোটাই পারতেন না তিনি। নাতি-নাতনিদের পড়তে দেখেই নতুন করে পাঠ নেওয়ার ইচ্ছে জাগে কুট্টিয়াম্মার। প্রাথমিকভাবে তাদের কাছেই পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। বর্ণ, সংখ্যা— এসবের সঙ্গে পরিচয় করায় তারাই। তারপর তিনি দ্বারস্থ হন প্রাইভেট টিউটরের। নাতি-নাতনিদের বই-ই হয়ে উঠেছিল তাঁর সঙ্গী। এক বছরের মধ্যেই আয়ত্ত করেন প্রাথমিক স্তরের ইতিহাস, ভূগোল ও বিজ্ঞান। সবশেষে ইংরাজি ভাষা। খুব সড়োগড়ো না হলেও, এখন দিব্যি ইংরাজি বই পড়তে পারেন তিনি।
মাত্র এক বছরের এই পাঠক্রমকে সঙ্গে নিয়েই কেরলের স্বাক্ষরতা পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি। সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রকাশিত হয় তার ফলাফল। যা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই। খোদ কেরলের শিক্ষামন্ত্রী বাসুদেবন শিভানকুট্টিও অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ১০৪ বছরের ‘তরুণী’-কে। নজির তৈরির জন্য দেওয়া হয়েছে বিশেষ স্মারকও। তবে এখানেই থেমে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই কুট্টিয়াম্মার। এবার আরেকটু উঁচু ক্লাসের পাঠ নিতে আগ্রহী তিনি। শতায়ু বৃদ্ধার এই আগ্রহই যেন অনুপ্রেরণা খুদে শিশুদের কাছে। যাঁরা কিশোর বয়সে পড়াশোনার সুযোগ পাননি, তাঁদের কাছেও আইডল কুট্টিয়াম্মা…
আরও পড়ুন
৭০ বছর বয়সে বিশ্বের কঠিনতম শৃঙ্গজয় মার্কিন বৃদ্ধার
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
১০৫ বছর বয়সে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট, নতুন বিশ্বরেকর্ড মার্কিন ‘তরুণী’-র