বয়স ১০২ বছর। তবুও অক্লান্তভাবেই বিজ্ঞান সাধনা করে চলেছেন তিনি। এমিরেটাস অধ্যাপক এবং গবেষকের ভূমিকা পালন করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু-দুটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়— পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি ও বাফেলো ইউনিভার্সিটিতে। কল্যামপুড়ি রাধাকৃষ্ণ রাও (Calyampudi Radhakrishna Rao)। কিংবদন্তি এই ভারতীয় গবেষকের মুকুটে এবার জুড়তে চলল এক নতুন পালক। আগামী জুলাই মাসে কানাডার অন্টারিও শহরে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের পক্ষে থেকে তিনি পেতে চলেছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন স্ট্যাটিস্টিকস’ পুরস্কার। পরিসংখ্যান জগতের ‘নোবেল পুরস্কার’ হিসাবেই বিবেচিত হয় যে সম্মাননা।
মজার বিষয় হল তাঁর এই ‘নোবেল’-জয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কলকাতা তথা বাংলা। আসলে কর্ণাটকে জন্ম হলেও, পরবর্তীতে অন্ধ্রপ্রদেশে বেড়ে ওঠা তাঁর। তারপর স্কুলের পাঠ শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে আসা বাংলার। ১৯৪৩ সাল। পরিসংখ্যানবিদ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভ করেন সিআর রাও। তবে শুধু অধ্যয়নই নয়, সে-সময় কলকাতার বুকেই একাধিক গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। ১৯৪৫ সালে তাঁর সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল ‘ক্যালকাটা ম্যাথামেটিক্যাল সোসাইটি’-র বুলেটিনে।
‘ইনফর্মেশন জিওমেট্রি’, ‘ক্রেমার-রাও লোয়ার বাউন্ড’, ‘রাও-ব্ল্যাকওয়েল থিওরেম’— মূলত এই তিনটি গবেষণাপত্র ও তত্ত্বের জন্যই বিশ্বজুড়ে পরিচিত কিংবদন্তি ভারতীয় গবেষক। আর এই তিনটি গবেষণাপত্রের প্রথমটিরই জন্ম হয়েছিল কলকাতায়। যদিও পরবর্তীতে এই তত্ত্বকে নানাভাবে পরিবর্তন করেছেন রাধাকৃষ্ণ রাও স্বয়ং।
পরিসংখ্যানবিদ্যা, গণিত তো বটেই চিকিৎসাশাস্ত্র এবং পদার্থবিদ্যার জগতেও অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে কিংবদন্তি অধ্যাপকের। যেমন ‘রাও-ব্ল্যাকওয়েল থিওরেম’-এর ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছে রেডিওলজি, রিস্ক অ্যানালাইসিস, স্পেকট্রোস্কোপির মতো বিষয়, তেমনই হিগস বোসন কণার অনুসন্ধান কিংবা বিগ ব্যাং থিওরির গণনা সম্ভব হয়েছে তাঁর উপস্থাপিত ‘ইনফর্মেশন জিওমেট্রি’-ই সৌজন্যে।
তবে শুধু গবেষণাই নয়, পাশাপাশি একাধিক ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেছেন সিআর রাও। সেই তালিকায় রয়েছে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজের অ্যান্থোপোলজিক্যাল মিউজিয়াম, পিটবার্গ ইনস্টিটিউট, ইন্টারন্যাশনাল বায়োমেট্রিক সোসাইটি-সহ একাধিক প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এমনই ১০০ পেরিয়েও আজও অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। এর আগে ১৯৬৮ ও ২০০১ সালে পেয়েছিলেন যথাক্রমে পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণ পুরস্কার। এবার দীর্ঘ ৭৫ বছরের অক্লান্ত বিজ্ঞান সাধণার জন্য পরিসংখ্যানবিদ্যা জগতের সবচেয়ে বড়ো পুরস্কারের ভাগীদার হলেন কিংবদন্তি ভারতীয় গবেষক।
Powered by Froala Editor