আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই ছিল দিনটা। সমুদ্রে রুটিন প্যাট্রোলিং-এ যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল মার্কিন রণতরী ওকলাহোমা। সেই জাহাজের ডেকেই কর্মরত ছিলেন তিনি। জাহাজ ছাড়ার সময়ও হয়ে গিয়েছিল। এবার ভেতরে ঢুকে হ্যাচ বন্ধ করার পালা। তবে জরুরি তলবে তাঁকে একবার নামতে হয়েছিল বন্দরে। জরুরি বলা ভুল হবে হয়তো। নিজে সিগারেট না খেলেও, জাহাজ ছাড়ার আগে শেষ মুহূর্তে সহকর্মীদের জন্যই সিগারেট নিতে বন্দরে নেমেছিলেন রাসেল (David Russel)। আর মুহূর্তের সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনই প্রাণ বাঁচিয়েছিল তাঁর।
আজ থেকে ঠিক আশি বছর আগের কথা। দিনটা ছিল ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর। ভয়াবহ বিমান হামলার সাক্ষী হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হ্যাঁ, পার্ল হারবারের (Pearl Harbour) কথাই হচ্ছে। সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে জাপানি বোমারু বিমানের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল একাধিক মার্কিন রণতরী। মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যেই ডুবে গিয়েছিল মার্কিন নেভির ওকলাহোমা জাহাজ। শুধু এই জাহাজটিতেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪২৯ জন নৌসেনা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ছিল ২৩০০-রও বেশি।
প্রাণ বেঁচেছিল ঠিকই। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর বিমান হামলার স্মৃতি এখনও বিভীষিকার মতো তাড়া করে বেড়ায় মার্কিন নেভির প্রাক্তন সেনানী ডেভিড রাসেলকে। বিমান হামলার পর ফোর্ড আইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন রাসেল। সেখানেই গড়ে উঠেছিল অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র। আহত মার্কিন সেনানীদের নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁদের। শুধু বোমার ক্ষতই নয়, আগুনে ঝলসে যাওয়া শরীরগুলোকে দেখে তীব্র অনুশোচনা গ্রাস করেছিল তাঁকে। রাসেলের বয়স এখন ১০১ বছর। সেই দুঃস্বপ্ন, অতীতের মুখোমুখি হতেই, শেষ বয়সে আজ ফের পার্ল হারবারে ফিরছেন ডেভিড।
প্রতি বছরই পার্ল হারবারে শহিদ হওয়া সেনানীদের বিশেষ সম্মাননা জ্ঞাপন করে থাকে মার্কিন নেভি। হয় একটি স্মারক অনুষ্ঠানও। জীবনসায়হ্নে এসে সেই অনুষ্ঠানেই অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন রাসেল। তিনিও হাজির থাকবেন প্রয়াত সহকর্মীদের জন্য শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও নীরবতা পালনের অনুষ্ঠানে।
১৯৬০ সাল পর্যন্ত নৌবিভাগেই কাজ করেছেন রাসেল। তারপর তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল বিমান বন্দরের কাজে। ১৯৮০ সালে অবসর নেন তিনি। কিন্তু পার্ল হার্বারে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও, কোনোদিন সুযোগ হয়নি তাঁর। সেই ইচ্ছেকেই এবার স্বীকৃতি দিল মার্কিন সেনাবাহিনী। মার্কিন প্রতিরক্ষা ফাউন্ডেশনের সঙ্গেই আজ পার্ল হারবারে পাড়ি দিলেন রাসেল। ঘুরে আসবেন আর্লিংটন জাতীয় সমাধিক্ষেত্রেও। সেখানেই ঘুমিয়ে রয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। দীর্ঘ সংলাপ বাকি রয়েছে তাঁদের সঙ্গেও…
Powered by Froala Editor