কিছুদিন আগেও গোটা অঞ্চলটা ঢাকা ছিল সবুজে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই বদলে গেল গোটা দৃশ্যপট। ধূধূ অঞ্চলজুড়ে এখন শুধু মাথা উঁচিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের গুঁড়ি। আরাবল্লীর কোট গ্রামের ‘মাঙ্গার বানি গ্রোভ’ অঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে গেল এমনই ঘটনা। রাতারাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল ২০ একর জমির বনভূমি। কাটা পড়ল হাজারের বেশি গাছ। আর তা নিয়েই এবার প্রতিবাদে সরব হলেন পরিবেশকর্মীরা।
বহু বছর আগেই পাঞ্জাবের এই অঞ্চলটির বনভূমিকে সুরক্ষিত করতে লাগু করা হয়েছিল ভূমি সংরক্ষণ আইন। সেই আইনের ৪ নং ধারায় স্পষ্টতই উল্লেখ রয়েছে গোটা এলাকায় যে কোনো ধরনের বৃক্ষচ্ছেদনই নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বন দপ্তরের নাকের ডগা দিয়েই ঘটে গেল এমন একটি ঘটনা। স্থানীয় পরিবেশকর্মীদের রিপোর্ট জানাচ্ছে মূলত ‘দেশি’ ও ‘বিলিতি’ কিকর এবং কাদিম গাছ শিকার হয়েছে এই বৃক্ষচ্ছেদনের। আর স্পষ্টতই তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে চলেছে প্রকৃতির ওপর। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে, শীঘ্রই গোটা অঞ্চলটিই যে উজাড় হয়ে যাবে, তেমন আশঙ্কাই দানা বাঁধছে পরিবেশকর্মীদের মনে।
কিন্তু এই অরাধের সঙ্গে জড়িত কারা? আর কেনই বা এই আকস্মিক বৃক্ষচ্ছেদন? এই প্রশ্নের উত্তরে লুকিয়ে রয়েছে অন্য এক রহস্য। বছর খানেক আগের কথা। পরিবেশের কথা চিন্তা করেই কোট গ্রামেরই অন্য এক অংশে প্রায় ১০ হাজার বাড়ি উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিছুদিন আগেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যাঁদের কাছে পৈতৃক সম্পত্তির দলিল রয়েছে তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য জমি দেওয়া হবে মাঙ্গার বানি গ্রোভে। অবশ্য যে অঞ্চলগুলিতে বনভূমি নেই সেই জায়গাগুলিই প্রদান করা হবে গ্রামবাসীদের, সেকথাও স্পষ্ট উল্লেখিত ছিল নোটিশে। এই নোটিশ প্রকাশের পরই কাটা পড়ে অসংখ্য গাছ। প্রশাসনের সন্দেহ জমি পাওয়ার আশাতেই বাফার জোনের বৃক্ষচ্ছেদন করেছেন গ্রামবাসীরা।
এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো তথ্যই জানাতে পারেনি প্রশাসন। অপরাধীদের হদিশ দিতে ব্যর্থ বন দপ্তরও। তবে বৃক্ষচ্ছেদন যাতে অব্যাহত না থাকে, সে জন্য বাড়ানো হয়েছে টহলদারি। অন্যদিকে পরিবেশকর্মীরা দুষছেন সরকারের পুনর্বাসন নীতিকেই। আরাবল্লীর ওই অঞ্চলে নতুন করে বসতিস্থাপন এবং খামার তৈরির অনুমতি দিলে আগামীতে কখনোই যে গাছ কাটা বন্ধ করা যাবে না— সে ব্যাপারেই সতর্ক করছেন তাঁরা। এখন দেখার, এই প্রতিবাদ আদৌ সরকারের সিদ্ধান্তকে টলাতে পারে কিনা…
আরও পড়ুন
উপড়ানো গাছ পুনর্বাসনের জন্য ‘কাঁধে’ তুলে নিলেন গ্রামবাসীরাই!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গাছতলায় ‘মুঘল-এ-আজম’এর গান রেকর্ড; গানের পুস্তিকা লিখেছেন শার্লক হোমসও!