১৯২২ সাল। ৩ অক্টোবর। পূর্ব লন্ডনের (East London) ইলফোর্ড শহর। থিয়েটার দেখে হাত ধরাধরি করেই বাড়ি ফিরলেন থম্পসন দম্পতি— পারসি এবং এডিথ। তবে মুহূর্তের মধ্যেই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে প্রেক্ষাপট। পিছন থেকে পারসির পিঠে এসে ছুরি বসায় বছর কুড়ির এক অজ্ঞাত যুবক। একবার নয়, একের পর এক ছুরিকাঘাত। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান পারসি। জ্ঞান হারিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী এডিথ-ও (Edith Thomposon)। কিন্তু কেন হঠাৎ করে খুন হতে হল পারসিকে?
আজ থেকে ১০০ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ড সে-সময় রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয় লন্ডনে। কয়েকদিনের মধ্যেই লন্ডন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় হত্যাকারী এডওয়ার্ড ফ্রান্সিস বাইওয়াটারস। জেরা করে জানা গিয়েছিল, আসলে এডিথকে ভালোলাগে তার। আর সেই কারণেই সে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছেন এডিথের স্বামীকে। হ্যাঁ, এডিথ এবং ফ্রান্সিসের মধ্যে যে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল, তারও প্রমাণ মেলে এডিথের লেখা বেশ কিছু চিঠি থেকে। আর তার প্রেক্ষিতেই মাত্র আড়াই মাসের মধ্যেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এডিথ এবং এডওয়ার্ডকে। ১৯২৩ সালের ৯ জানুয়ারি হলোওয়ে কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় তাঁদের। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, যদিও সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যে এডিথই হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন বা নির্দেশ দিয়েছিলেন এডওয়ার্ডকে। তবে সত্যিই কি অপরাধী ছিলেন তিনি?
এই প্রশ্ন বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে নানাভাবে। মাত্র দু’মাসের মধ্যে এমন একটি জটিল মামলার তদন্ত, বিচার এবং শাস্তিপ্রদানের প্রক্রিয়া নিয়ে সে-সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। এমনকি আজও এই বিচার নিয়ে খুশি নন এডিথের উত্তরসূরিরা। তার কারণ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার হওয়া এডিথ এবং এডওয়ার্ডের আরও বেশ কিছু চিঠি। সেখান থেকে সুস্পষ্টই বোঝা যায়, পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লেও, স্বামী পারসিকে কখনও ছেড়ে যেতে চাননি এডিথ।
এই প্রমাণ নতুন করে পুনরাবিষ্কৃত হওয়ার পরই, সুবিচারের জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এডিথের উত্তরাধিকারী ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক রেনে ওয়েইস। একাধিকবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর, অবশেষে তাঁর সেই আবেদন গ্রহণ করলেন যুক্তরাজ্যের জাস্টিস সেক্রেটারি এবং ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ডমিনিক রাব। ১০০ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিলেন বিচারমন্ত্রকের ‘ক্রিমিনাল কেস রিভিউ কমিশন’ বিভাগকে।
উল্লেখ্য, এই প্রথম নয়। এর আগেও এ-ধরনের একাধিক মামলার পুনর্তদন্ত এবং পুনর্বিচার করেছে যুক্তরাজ্যের বিচারমন্ত্রকের এই বিশেষ শাখা। যেমন বছর কয়েক আগেই প্রমাণ হয়, আদতে নির্দোষ ছিলেন ১৯৫৩ সালে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়া এক ব্যক্তি। একই পদ্ধতিতে বর্তমানে পুনর্বিচার চলছে যুক্তরাজ্যের পোস্টঅফিস কেলেঙ্কারিরও।
এডিথের উত্তরাধিকারী রেনের কথায়, নতুন করে পুনর্বিচারের এই প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনতে পারবে না এডিথকে। কিন্তু নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও কেন মৃত্যুর পর তাঁকে বহন করে যেতে হবে ‘অপরাধী’-র তকমা? তাছাড়া গ্রেপ্তারের পর প্রশাসনের অকথ্য অত্যাচারেরও শিকার হতে হয় তাঁকে। সবমিলিয়ে, অবিচারের পর অবিচার হয়েছে তাঁর সঙ্গে। এত বছর পর নতুন করে এই মামলার বিচার সেই যোগ্য সম্মানটুকু এনে দেবে এডিথকে, এমনটাই অভিমত রেনের…
Powered by Froala Editor