সপ্তাহখানেক আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছে সিরিয়ার জাতীয় নির্বাচন। আবারও ৭ বছরের জন্য নিশ্চিত ক্ষমতায় ফিরে এলেন প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ। শুধু তাই নয়, তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা নাকি ৯৫ শতাংশ। বাস্তবিক বিরোধী স্বর স্তব্ধ করে আসাদ রীতিমতো একনায়কত্ব চালিয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে বারবার। কিন্তু এতকিছুর পরেও ৯৫ শতাংশ ভোট পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। আন্তর্জাতিক স্তরে সিরিয়ান নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কিন্তু তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন থেকে যায়, গত ১০ বছর ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধ কি আবারও ব্যাপক রূপ নিতে চলেছে?
আসাদ অবশ্য ক্ষমতায় এসে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর এই নির্বাচনী সাফল্যই প্রমাণ করে দেশে গৃহযুদ্ধের অবসান হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা একেবারেই সে-কথা বলছে না। বিগত ১০ বছর ধরে যে বিদ্রোহের আগুন চারিদিক পুড়িয়েছে, তা এত সহজে নিভে যাওয়ার নয়। ২০১১ সালে আরব স্প্রিং আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে এবং বেশ কিছু প্রশাসনিক সংস্কারের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন সিরিয়ার সাধারণ মানুষ। কিন্তু স্বৈরাচারী আসাদ সরকারের সেনাবাহিনী সরাসরি উত্তর দিয়েছিল রাইফেলের নলে। সেই থেকে অশান্তির শুরু। ক্রমশ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে গ্রাস করে নেয় নানা বৈদেশিক ও সন্ত্রাসবাদী শক্তি। ইসলামিক স্টেট বা আল-কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনের পাশাপাশি আমেরিকা, চিন বা রাশিয়ার মতো দেশও ঝাঁপিয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের ক্ষমতা বিস্তারের উদ্দেশ্যে। আর এই বহুমুখী সংঘর্ষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সিরিয়ার সাধারণ মানুষই।
সম্প্রতি সিরিয়ার নির্বাচনী ফলাফলের পাশাপাশি প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান। সৌজন্যে সিরিয়ান অবজার্ভেটরি অফ হিউম্যান রাইটস। এই একটি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে যায় গৃহযুদ্ধের বাস্তব ছবিটা। এই ১০ বছরে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন সামরিক সংঘর্ষের কারণে। তার মধ্যে আছে অন্তত ২৫ হাজার শিশু। এমনকি এখনও সংঘর্ষ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। সিরিয়ার প্রতিটা রাজপথ যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে পড়ে আছে। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে বাসস্থান ত্যাগ করেছেন অনেকে। সিরিয়া থেকে তুর্কিতে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৩০ লক্ষ মানুষ। মোট ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ সিরিয়া ত্যাগ করেছেন। আর দেশের মধ্যেই উদ্বাস্তু হয়ে দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ। এই বিরাট উদ্বাস্তু মিছিলকে সামাল দেওয়া খুব সহজ নয়। আর আসাদের স্বৈরাচারী সরকার কি তার ন্যূনতম চেষ্টাও করবে? হয়তো বৈদেশিক নীতির ভিতর দিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারবেন আসাদ। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আগুন নেভাবেন কীভাবে?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
যুদ্ধ, মহামারী, অভিবাসনে অশান্ত গোটা বিশ্ব; ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে মানব সভ্যতা?