Powered by Froala Editor
ম্যামথের হাড়ের স্থাপত্য থেকে যিশুর ক্রুশবিদ্ধকরণের পেরেক : ২০২০-র সেরা ১০ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
১/১১
চলতি বছরে মহামারীর কারণে সারা বিশ্বই বন্দি হয়েছিল চার দেওয়ালের মধ্যে। তবে তার মধ্যেও নিজেদের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সাধারণ মানুষ, পর্যটকদের ভিড় না থাকায় খানিকটা নির্বিঘ্নেই অনুসন্ধান করার সু্যোগ পেয়েছেন তাঁরা। সামনে এসেছে অবাক করা কিছু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। বছর শেষে সেসবের মধ্যে থেকেই সেরা ১০ ঐতিহাসিক আবিষ্কারকেই ফিরে দেখা যাক আবার...
২/১১
বিশ্বের প্রাচীনতম মহিলা শিকারির সমাধি— দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এক শিকারির সমাধি। বয়স আনুমানিক ৯ হাজার বছর। সমাধিতে পাওয়া দেহের অবশিষ্টাংশ পরীক্ষা করেই চমকে ওঠেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। কোনো পুরুষ নয়, সেই শিকারি ছিলেন একজন মহিলা। ইতিহাসের নিরিখে পশু-শিকারে একচেটিয়া প্রাধান্য ছিল পুরুষদেরই। তবে এই আবিষ্কার প্রাচীন সভ্যতার অজানা মাতৃতন্ত্রের হদিশ দেয় গবেষকদের।
৩/১১
ব্রিটেনের আদিমতম প্রেক্ষাগৃহের হদিশ— ইউসিএল ইনস্টিটিউট অফ আর্কিওলজি’র গবেষকরা ব্রিটেনের লেড লিয়ন অঞ্চলে খুঁজে পান এই প্রক্ষাগৃহের ধ্বংসাবশেষ। অনুমান করা হয় ব্রিটেনের প্রাচীনতম প্রেক্ষাগৃহই এটি। এলিজাবেথিয়ান প্রেক্ষাগৃহটি স্থাপিত হয়েছিল আনুমানিক ১৫৬৭ সালে। লন্ডনের একদম শুরুর দিকের থিয়েটার কোম্পানিগুলির অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হত এই প্রেক্ষাগৃহেই। বিশেষ করে ১৫৯০-এর দশকে শেক্সপিয়ারের বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ করার পিছনে অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে ইংল্যান্ডের এই আদিমতম প্রেক্ষাগৃহের।
৪/১১
হারিয়ে যাওয়া মায়া সভ্যতার রাজধানী— মেক্সিকোর একটি প্রাচীন গো-চরণভূমির পিছনের জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। পরে পুরো জায়গাটির পরীক্ষা করেন ব্রাউন এবং ব্র্যানডিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকরা। খননকার্যের পর উঠে আসে সমগ্র একটি নগরী। গবেষকদের বিশ্বাস, শাক জি রাজত্বকালে মায়া সভ্যতার রাজধানী ছিল এই প্রাচীন শহর।
৫/১১
দৈত্যাকার ম্যামথের হাড় দিয়ে তৈরি আদিম স্থাপত্য— কোটেনকি-বোরশেভো অঞ্চলে এর আগেও পাওয়া গিয়েছিল ম্যামথের বহু নিদর্শন। প্রথমে দু’-একটি ম্যামথের হাড় পাওয়া তাই আশ্চর্যের কিছুই ছিল না গবেষকদের কাছে। পরে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সন্ধান পান এক বিশালাকার স্থাপত্যের। যা পুরোপুরিই তৈরি হয়েছে দৈত্যাকার ম্যামথের হাড় দিয়ে। পুরাতাত্ত্বিক এই নির্মাণের ব্যাসের আয়তন ১২.৫ মিটার। আনুমানিক ২৫ হাজার আগের তৈরি এই নির্মাণ পৃথিবীর প্রাচীনতম ও বৃহত্তম ম্যামথের হাড়ের স্থাপত্য বলেই ধরে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যা তৈরিতে শিকার করা হয়েছিল অন্তত পক্ষে ৬০টি ম্যামথকে।
৬/১১
বিশ্বের প্রাচীনতম তন্তু’র নিদর্শন— আনুমানিক ৩০ হাজার বছর আগেও পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাকই ব্যবহার করত মানুষ। সুতোর আবিষ্কার হয় আরও পরে। কিন্তু ফ্রান্সের আব্রি দু মারাসে খুঁজে পাওয়া এই নিদর্শন ভেঙে দেয় সমস্ত পূর্ববর্তী ধারণাই। গবেষক ব্রুস হার্দি এবং তাঁর সহকর্মীরা এই অঞ্চল থেকেই উদ্ধার করেন তিনটি প্রাকৃতিক তন্তুর বান্ডিল এবং ৬০ মিলিমিটার দীর্ঘ পাথরের সূচ। যার বয়স আনুমানিক ৪১-৫২ হাজার বছর। মধ্য প্রস্তর যুগের লিয়ান্ডারথাল সভ্যতায় ফাইবার প্রযুক্তির এই ব্যবহার অবাক করে ঐতিহাসিকদেরও।
৭/১১
মিশরে একই সঙ্গে ১০০টিরও বেশি কফিন— মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে কয়েক মাইল দূরে মাটির তলায় লুকিয়ে থাকা এই নিদর্শন সামনে আসতেই চমকে উঠেছিলেন ঐতিহাসিকরা। কারণ একটি দুটি নয়, একই সঙ্গে প্রায় ১০০টির বেশি কফিন উদ্ধার করেন তাঁরা। সবগুলির মধ্যেই ভরা ছিল মমি। সেইসঙ্গে পাওয়া যায় ৪০টি সাকারার নেক্রোপলিশের সোনার মূর্তি। মিশরের টলেমিক যুগ চলাকালীন অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৪-৩০ অব্দের মধ্যে সমাধিস্থ করা হয়েছিল এইসকল সার্কোফেগাসগুলিকে। শুধু গবেষক মহলেই নয়, নেট-দুনিয়াতেও ভাইরাল হয়েছিল এই আবিষ্কার।
৮/১১
যিশু খ্রিস্টের ক্রুশবদ্ধকরণে ব্যবহৃত পেরেক— পিলেটের অন্যতম এক তদারক সায়াফাসের সমাধি থেকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল একটি বাক্স। যাতে মৃতদের হাড়ের সঙ্গেই ছিল দুটি জং ধরা লোহার পেরেক। ১৯৮৬ সালে খুঁজে পাওয়া গেলেও, সম্প্রতি সেগুলির পরীক্ষা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন গবেষক আরেয়া শিমরান। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে পেরেকগুলির বিশ্লেষণ করতেই তিনি দেখতে পান জংয়ের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে হাড় এবং কাঠের আণুবীক্ষণিক টুকরো। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় এই পেরেক ব্যবহৃত হয়েছিল ক্রুশবদ্ধকরণে। যদিও ঐতিহাসিক আখ্যানের সঙ্গে সবকিছু মিলে গেলেও স্বয়ং গবেষক খানিকটা হলেও বিতর্কের জায়গা খোলা রেখেছেন। জানিয়েছিলেন যিশুর জিনগত কোনো নমুনার সংরক্ষণ না হওয়ায়, জোর গলায় এই দাবি খানিকটা অনৈতিক।
৯/১১
প্রাচীনতম ন্যানোপার্টিকল— আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ন্যানোপার্টিকল, ন্যানোটেকনোলজি খুবই পরিচিত শব্দবন্ধ। কিন্তু চার-পাঁচশো বছর আগেও কি এই ধরণের শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিল মানব সভ্যতা? বোধ হয় না। আর সেই জায়গায় ২৬০০ বছর আগের তৈরি ন্যানোপার্টিকলের নিদর্শন চমকে দিয়েছিল সারা দুনিয়াকে। তামিলনাড়ুর কিলাডি থেকে একরাশ প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহ খুঁজে পেয়েছিলেন গবেষকরা। তার মধ্যে ছিল বেশ কিছু মাটির পাত্রও। সেগুলির বিশ্লেষণ করতে গিয়েই তাঁরা দেখেন, পাত্রের গায়ে রয়েছে সূক্ষ্ম কালো রঙের কোনো পদার্থের নকশা। বিশ্লেষণে তাজ্জব বনে যান সকলেই। কারণ এই পদার্থ পারতপক্ষে ছিল কার্বন ন্যানোটিউব!
১০/১১
কলম্বিয়ায় আবিষ্কৃত ১২ হাজার বছরের পুরনো প্রস্তরচিত্র— ছোট-খাটো কোনো গুহা নয়। ৮ মাইল দীর্ঘ পাথরের খাড়াই দেওয়ালের ওপর প্রাকৃতিক রং দিয়ে আঁকা প্রস্তরচিত্র চমকে দিয়েছিল প্রত্নতাত্ত্বিকদের। কলম্বিয়া আমাজনে লুকিয়ে থাকা এই প্রস্তরচিত্রে ক্যামেলিড, জায়েন্ট স্লথ, ম্যাসটোডন থেকে শুরু করে মানুষের প্রতিকৃতি, বিভিন্ন জ্যামিতিক চিত্র— সবই খুঁজে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। ১২ হাজার বছর আগে আঁকা এই ছবি বিস্মিত করে তোলে গোটা বিশ্বকেই। কারণ পাথুরে দেওয়ালের উচ্চতা কোথাও কোথাও ২৫ ফুট পর্যন্ত। এত উচ্চতায় কীভাবে এঁকেছিল আদিমকালের মানুষ, তা-ই এক রহস্য।
১১/১১
প্রাচীনতম দুগ্ধ-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের হদিশ— পৃথিবীর প্রাচীনতম দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের হদিশ মিলেছে এই বছরই। বয়স প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর। অনুমান করতে পারেন কোথায় ছিল এমন শিল্প? হ্যাঁ ভারতেই। সিন্ধু সভ্যতায় এমনি নির্দশন খুঁজে পান এক বাঙালি গবেষক। এর আগেও দয়ারাম সাহানি ও রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় দুগ্ধ শিল্পের কথা উল্লেখ করেছিলেন সিন্ধু সভ্যতার বিষয়ে। কিন্তু তা ২৫০০ হাজার বছরের পুরনো নিদর্শনের নিরিখে। এক ধাক্কায় সেই সময়কালটাই এই আবিষ্কারে পিছিয়ে যায় ২ হাজার বছর। তাও ভেড়া বা ছাগল নয়, গরু-মোষের দুধেরই প্রচলন ছিল প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায়...