লাফিয়ে বাড়ছিল আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে লকডাউন ছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর আর কোনো পথই খোলা ছিল না সরকারের কাছে। কিন্তু দু’সপ্তাহের এই লকডাউনেই কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ। তাঁদের সাহায্য করতেই এবার এই কঠিন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলেন হুগলি জেলার তরুণ-তরুণীরা। দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে এবার তাঁরা অভিনব ‘এক টাকার বাজার’ চালু করলেন সালকিয়ায়।
“বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে দিতেই এই সিদ্ধান্তটা নিই আমরা। প্রত্যেকেই নিজেদের সঞ্চয়ের কিছু টাকা দিয়ে শুরু করি এটা”, বলছিলেন মনস্বিতা দেব। মনস্বিতা এবং তাঁর দুই বন্ধু মধুশ্রী সাধুখাঁ এবং তথাগত পালের যৌথ উদ্যোগেই শুরু হয়েছে হুগলির এই এক টাকার বাজার। সালকিয়ার হরগঞ্জ বাজারে একটি পরিত্যক্ত দোকানকে তাঁরা বদলে ফেলেছেন অভিনব এই বাজারে। সপ্তাহে তিন দিন করে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে পরিষেবা।
কিন্তু কারা পাচ্ছে এই এক টাকার বাজারের সুবিধা? “যাঁরা একদমই গরিব, তাঁদেরকেই এই পরিষেবাটা দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা তাঁদের আর্থিক অবস্থা যাচাই করি। তার প্রেক্ষিতে প্রত্যেকের আধার নম্বর-সহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে একটা তথ্যভাণ্ডারও তৈরি করেছি আমরা”, বলছিলেন মধুশ্রী সাধুখাঁ। জানা গেল রেশন কার্ডের আদলে প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে একটি করে কার্ড। সেই কার্ড দেখালে তবেই প্রতি মাসে দু’বার করে বাজার করার সুবিধা পাবেন উপভোক্তারা। পাওয়া যাবে ২ কেজি চাল, ১ কেজি আলু, ৪০০ গ্রাম ডাল, ৩০০ গ্রাম পেয়াজ, নুন, চা, মুড়ি, বিস্কুট-সহ একাধিক সামগ্রী। আর এই সবকিছুই পাওয়া যাবে মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে।
আরও পড়ুন
উপার্জনের দায়ে অটো চালাচ্ছেন জাতীয় স্তরের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন
আরও পড়ুন
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তৈরি ক্যাফে, ধুঁকছে লকডাউনের পরেও
তবে বিনামূল্যেই কি সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যেত না? না, সেই পথে হাঁটেননি হুগলির এই তরুণ উদ্যোক্তারা। কারণ? “আমরা কিন্তু কোনো ভিক্ষুককে পরিষেবা দিচ্ছি না। যে সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষ লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছি। তাঁদের সেই সম্মানটা দিতেই এই ন্যূনতম দাম ধার্য করা হয়েছে”, উত্তর দিলেন তথাগত পাল।
আরও পড়ুন
লকডাউনে গঙ্গায় দূষকের ঘনত্বে ৫০ শতাংশ হ্রাস : কানপুর আইআইটি
তবে শুধু দোকান পরিচালনাই নয়, বড়বাজার থেকে দোকানের সামগ্রীও নিয়ে আসছেন তাঁরাই। বিভিন্ন বাজারে তদারকি করে সাশ্রয়ে পাইকারি মূল্যেই জিনিস কিনছেন। কিন্তু কতটুকুই বা সামর্থ্য? লকডাউনে বন্ধ হয়েছে নিজেদের উপার্জনও। পর্যটকের অভাবে মধুশ্রীর হোটেলে তালা। বিমানসেবিকা মনস্বিতাও এখন সম্পূর্ণ বাড়িতে বসে। এসবের পরেও সামান্য ক্ষমতা নিয়েই খেটেখাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর এক অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিন বন্ধু। বর্তমানে তাঁদের এই কর্মকাণ্ডের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন একাধিক মানুষ। যে যার মতো করে বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত। কিন্তু এভাবে পথচলা শুরু করতেই বা পারেন ক’জন?
Powered by Froala Editor