ভারতের বুকে মানুষের বাস ঠিক কত বছর আগে শুরু হয়েছিল, তা আজও অজানা ঐতিহাসিকদের কাছে। সম্ভবত ভীমবেটকার গুহাচিত্রগুলিই এই দেশে মানুষের বসবাসের প্রাচীনতম প্রমাণ। তবে তার বয়সও ৪০ হাজার বছরের বেশি নয়। কিন্তু যদি বলা হয়, ১ লক্ষ বছর আগেও ভারতের বুকে মানুষের বসবাস ছিল! আর সেই মানুষ গুহার গায়ে ছবি এঁকে নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণও রেখে গিয়েছে! সম্প্রতি হরিয়ানার ফরিদাবাদ অঞ্চলে এমনই নিদর্শন আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
গত জুন মাসেই ফরিদাবাদের মঙ্গারবনী অরণ্যের কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুনীল হরসানা। মূলত আরাবল্লী পার্বত্য অঞ্চলের অরণ্য-প্রকৃতির গুরুত্ব বোঝাতেই তিনি এই ছবিগুলি তুলেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই অদ্ভুত কিছু ছবি দেখে চোখ আটকে যায় প্রত্নতাত্ত্বিকদের। ছবিগুলি নিশ্চিতভাবে আদিম গুহাবাসী মানুষের হাতে আঁকা। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের গবেষকরা। আর প্রাথমিক পরীক্ষার পরেই তাঁরা অবাক। ছবিগুলি যে প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষের আঁকা তাতে সন্দেহ নেই। উপরন্তু এক একটি ছবির বয়স ১ লক্ষ বছরের কাছাকাছি বলেই অভিমত গবেষকদের। তবে এই সময়ে মানুষ রঙের ব্যবহার করেনি। বরং পাথরের গায়ে খোদাই করে চলেছে ছবি আঁকা। রঙের ব্যবহার শুরু হয়েছে মোটামুটি ৪০ হাজার বছর আগে।
শুধুই মঙ্গারবনী অরণ্যেই নয়, আশেপাশের অঞ্চলেও একই ধরণের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ফরিদাবাদের শিলাখারি, কোট, ধাউজের পাশাপাশি গুরগাঁও-এর রোজ কা গুজ্জার এবং দমদমাতেও ছড়িয়ে রয়েছে এমনই সব নিদর্শন। শুধুই আদিম মানুষ নয়, আধুনিক মানুষের বসবাসের চিহ্নও ছড়িয়ে রয়েছে চারিদিকে। এই গুহাগুলিতে প্রায় ৭-৮ হাজার বছর আগে পর্যন্ত মানুষের বাস ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছবিতেও বৈচিত্র এসেছে। প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবির বদলে এসেছে নানা সাংকেতিক চিহ্ন এবং গাণিতিক সমীকরণের নিদর্শনও। সভ্যতা হিসাবে গড়ে না উঠলেও বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বসতিগুলির একটি যে ছড়িয়ে ছিল আরাবল্লী পার্বত্য অঞ্চলেও, তার স্পষ্ট নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
এই আবিষ্কারের পর সুনীল হরসানা জানিয়েছেন, তিনি বহু আগে থেকেই জানতেন এই গুহাগুলির অস্তিত্বের কথা। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা না থেকেও এগুলির গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। তবে এই আবিষ্কার আরাবল্লী পর্বতের প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দিল বলেই অভিমত তাঁর। আর রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, নিদর্শনগুলির যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এই দেশের আনাচে-কানাচে হয়তো এমনই নানা নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। শুধু তাদের উপযুক্ত শণাক্তকরণ হয়নি আজও। কোনোটা বা শণাক্তকরণের আগেই হারিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন
ঠুড়গা পাওয়ার স্টোরেজ প্রকল্পে ধ্বংস হবে প্রস্তরযুগের প্রত্নক্ষেত্রও, সরব পরিবেশকর্মীরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কলোম্বিয়ায় আবিষ্কৃত ১২ হাজার বছর আগের প্রস্তরচিত্র, তাজ্জব প্রত্নতাত্ত্বিকরা