পরিবেশ বিপন্নতার জন্য বে-আইনি বৃক্ষছেদন নিয়ে তো সবসময়ই আলোচনা হয়। কিন্তু শুধুই কি বে-আইনি বৃক্ষছেদনই পরিবেশের সমস্যা ডেকে আনে? নাকি সম্পূর্ণ আইনি পথে সরকারের ছাড়পত্র নিয়ে যে-সমস্ত বাণিজ্যিক প্রকল্প অরণ্য ধ্বংস করে, তাও একইরকম দায়ী? এই নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে পরিবেশকর্মীদের বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত বক্তব্য শোনা গেলেও সামগ্রিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না সেভাবে। সম্প্রতি কলম্বিয়ার কয়েকজন বিজ্ঞানী সেই আপাত অচর্চিত দিকটিই তুলে আনলেন তাঁদের গবেষণাপত্রে। আর তাতে দেখা গিয়েছে, বিগত দুই দশকে সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে খননকার্যের জন্যই কলম্বিয়ায় আমাজনের ১ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর অরণ্য ধ্বংস হয়েছে। ‘এনভারমেন্টাল রিসার্চ লেটার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই পরিসংখ্যান।
ইউনিভার্সিটি অফ রোসারিও-র অধ্যাপক আন্দ্রেজ গোঞ্জালেজ ও তাঁর সহকর্মীরা শুধুমাত্র সরকারি ছাড়পত্র পাওয়া খনিগুলির বিষয়েই তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আশা করেছিলেন বে-আইনি বৃক্ষছেদনের তুলনায় এর পরিমাণ অনেকটাই কম হবে। আর কিছু না হোক, কিছুটা সরকারি নিয়ন্ত্রণ তো রয়েছেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল পরিসংখ্যান একদমই আশাব্যঞ্জক নয়। ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ধ্বংস হওয়া অরণ্যের মোট আয়তন ১২১৮১৯ হেক্টর। অবশ্য উপযুক্ত পরিকাঠামো মেনে খনকার্য চালালে এত বিরাট আয়তনের বনভূমি ধ্বংস করার প্রয়োজন কী, তা বুঝতে পারছেন না অধ্যাপক গোঞ্জালেজ। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে ১ কেজি সোনা তোলার জন্য কাটা হয়েছে অন্তত ২০টি প্রাচীন গাছ। ১ হাজার টন কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে ১০টি গাছকে। আপাত অনুপাতে তা খুব বেশি মনে না হলেও সামগ্রিক চেহারা সত্যিই ভয়ঙ্কর।
নাসা স্যাটেলাইট প্রেরিত ছবি এবং বিভিন্ন সরকারি তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে এই পরিসংখ্যান। তবে পরিসংখ্যানের চেয়েও এক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। অধ্যাপক গোঞ্জালেজের মতে, ২০১৬ সালে কলোম্বিয়ার শান্তিচুক্তির পর থেকে সরকারি অর্থে অরণ্য ধ্বংসের পরিমাণ আরও বেড়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরে অন্তত ৪ লক্ষ হেক্টর বনভূমি মুছে যাবে আমাজনের বুক থেকে। আর তার জন্য বে-আইনি পাচারকারীরা দায়ী হবে না। দায়ী হবে কলোম্বিয়া সরকারই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গাছের পাতা থেকেই স্যানিটাইজার! আশ্চর্য দাবি উত্তরবঙ্গের গ্রামের!